8/16/2007

মুক্ত স্বাধীন সফটওয়্যার

ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুচ্ছ। সাধারণত ওপেনসোর্স বলতে সবাই ফ্রিওয়্যার বুঝে থাকেন। আসলে ওপেনসোর্স আর ফ্রিওয়্যারের মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ওপেনসোর্সের মূল অর্থ হচ্ছে সফটওয়্যারের কোডে ব্যবহারকারীর প্রবেশাধিকার থাকবে। যা কিনা ফ্রিওয়্যারে সম্ভব নয়। আসুন টার্মগুলো বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করি।

ফ্রিওয়্যার - এটা এক ধরণের সফটওয়্যার যা কিনা প্রোগ্রামার বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকেন। এ সফটওয়্যারের ব্যবহারকারীর এটাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা অন্যকিছু করার কোন অধিকার থাকে না। প্রোগ্রামার যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সফটওয়্যার তৈরী করেছেন, শুধুমাত্র সে কাজেই এটাকে ব্যবহার করা সম্ভব। সফটওয়্যারটির লেখক এর সোর্সকোড সরবরাহ করেন না। ফলত এ ধরণের সফটওয়্যারের মান ও ভবিষ্যত উন্নয়ন এককভাবে শুধুমাত্র লেখকের উপর নির্ভর করে।

অন্যদিকে, ওপেনসোর্স সফটওয়্যারে সোর্সকোড ব্যবহারকারীর কাছে উন্মুক্ত থাকে। ফলে সফটওয়্যারে যে কোন ধরণের পরিবর্তন করা ব্যবহারকারীর জন্য সহজ এবং আইনসম্মত। যেহেতু সোর্সকোড উন্মুক্ত, যে কেউ এই সফটওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন সাধন করতে পারবে। প্রয়োজনে এর উপর ভিত্তি করে নতুন সফটওয়্যারও তৈরী করতে পারবে। এর ফলে একই কোড বারবার লেখা হতে রেহাই পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরী করে এর উপর নতুন ধারণার সফটওয়্যার তৈরী করা সম্ভবপর হয়।

ওপেনসোর্সের মূল শক্তি হচ্ছে কমিউনিটি। একটা ওপেনসোর্স সফটওয়্যারকে ঘিরে প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, ব্যবহারকারীর যে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে, তারই নাম কমিউনিটি। এ ধরণের কমিউনিটিতে কাউকেই ছোট করে দেখা হয় না। প্রত্যেকের অবদানকেই কৃতজ্ঞতা সহকারে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যার ফলে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীও এ কমিউনিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই বিবেচিত হন।

ওপেনসোর্স সফটওয়্যার মানেই যে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, তা নয়। বাণিজ্যিক ওপেনসোর্স সফটওয়্যারেরও বাজার বেশ ভালো। এরকম সফটওয়্যারের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ এ্যপাচে, মাইএসকিউএল এবং লিনাক্স। ওয়েব সার্ভারে এ্যপাচের জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। তেমনি রিলেশন্যাল ডাটাবেস সার্ভারেও মাইএসকিউএল অন্যতম। আর লিনাক্স তো বর্তমানের সার্ভার ওএসে অন্যতম শক্তি।

তবে যে কারণে ওপেনসোর্সের জনপ্রিয়তা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার পেছনের অন্যতম কারণ মোজিলার ফায়ারফক্স এবং লিনাক্সের ডেস্কটপ বাজার দখলের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া। উবুন্তু লিনাক্স ডেস্কটপে এখন খুবই জনপ্রিয় এবং ব্যবহার বান্ধব অপারেটিং সিস্টেম। মাইক্রোসফটের একচেটিয়া ডেস্কটপ বাজারে ভাগ বসাতে ইতোমধ্যেই উবুন্তু সফল পদক্ষেপ ফেলতে পেরেছে।

5 comments:

Enayet said...

ওপেন সোর্সের আসল সুবিধা কিন্তু ইউজারের নয়। এটা ডেভলপারদের সুবিধা। তবে হ্যাঁ, ইউজার হয়তো ওপেন সো্র্সের সফটওয়্যার বিনামূল্যে পেতে পারেন।

লিনাক্স ওপেনসোর্স হওয়ার ফলে এর অনেক বিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আসলে কি একটা স্ট্যাবল ওএস ইউজাররা পেয়েছে। লিনাক্সের বয়স তো কম হলনা।

আমার কম্পিউটার বন্ধু বলেন, থিওরেটিকালী বললেও বলা হয় ওএস হতে হবে ওপেন সোর্স। তার কথা আমি বুঝিনা। হয়তো মাথা অত ভালনা, তাই।

আমি লিনাক্স এর ভক্ত। মন্তব্য পড়ে ভুল বুঝবেন না। কোন বিষয়ে আরো বেশী কিন্তু জানার জন্য আমি সাময়িকভাবে বিরোধি অবস্থান নেই। :)

নাসিম (Nasim) said...

স্ট্যাবল বলতে আসলে কী বুঝাতে চাইছেন? বুঝলাম না। আমি তো আমার উবুন্তু কোন রকম রিস্টার্ট ছাড়াই চালাচ্ছি আজ প্রায় ৩ মাস। আমার কম্পিউটার এই তিন মাসে একবারও শাটডাউন করতে হয়নি।

ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজে অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলে উইন্ডোজ তাদের কাছে সহজ মনে হয়। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। আর লিনাক্স বেশ ভালো একটা পর্যায়ে চলে এসেছে বলেই ডেল, লেনোভো, এসার এখন লিনাক্স প্রি-ইনস্টলড মেশিন বাজারে ছাড়ছে।

শামীম said...

বর্তমানে মূল সমস্যা হল হার্ডওয়্যার কম্পাটিবিলিটি। এটা লিনাক্সের বা ওপেনসোর্সের সমস্যা নয়। হার্ডওয়্যার মেকারগণ লিনাক্সের জন্য ড্রাইভার দেন না; আর অনেকক্ষেত্রে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের সাথে কিছু হার্ডওয়্যার কনফ্লিক্ট করে - যা হয়তো পরবর্তীতে আর করবে না। -- একবার ওপেন অফিসে করা প্রেজেন্টেশন করতে গিয়ে পুরা ধরা খেয়ে গেলাম :( ।

নাসিম (Nasim) said...

আসলে স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট ব্যবহার না করার সমস্যা এটা। আপনি যদি পিডিএফ ব্যবহার করতেন, তাহলে এ সমস্যা হত না। আমি তো ম্যাকে কিনোট ব্যবহার করি। এটা পাওয়ারপয়েন্টের চাইতে আলোকবর্ষ এগিয়ে আছে। কিন্তু কিনোট তো ম্যাক ছাড়া চলবে না। তাই প্রেজেন্টেশন সব সময় দু'টো ফরম্যাটে রাখি। কিনোট এবং পিডিএফ। ভাগ্য ভালো হলে কিনোট চালাতে পারি, নাহলে পিডিএফে চালাতে হয়।

jatiswar said...

আসলে অনেকেই ওপেনসোর্স এবং ফ্রি-ওয়্যার কে গুলিয়ে ফেলেন...আপনার প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ...

-বিপ্র